4 May 2025
# Tags
#অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা

স্বপ্ন যাদের অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার, স্কলারশিপ যেভাবে পাবেন

জীবনযাত্রার মান কিংবা শিক্ষাব্যবস্থার মান, যাই বলা হোক না কেন বিশ্বের সেরা দশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অবশ্যই জায়গা পাবে। উচ্চশিক্ষার জন্য যে যে দেশে শিক্ষার্থীদের কাছে পছন্দের তার মধ্য অন্যতম অস্ট্রেলিয়া। দেশটির ক্যানবেরা, মেলবোর্ন, সিডনি, ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড, পার্থ শহরে রয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পড়াশোনার মধ্য কাজের সুযোগসহ নানা সুবিধার কারণে দেশটিতে বৃত্তি নিয়ে অনেকেই পড়তে যেতে চান। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে।

সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাওয়ার ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ। পাশাপাশি দেশটিতে পড়াশোনার সঙ্গে আছে খণ্ডকালীন (পার্ট টাইম) কাজের সুযোগ। তাইতো বিশ্বজুড়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বর্গ বলা যেতে পারে অস্ট্রেলিয়াকে। উন্নত শিক্ষাব্যবস্থা এবং জীবন যাত্রা উচ্চ মানের জন্য অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় এখানকার উচ্চশিক্ষা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হলেও এখানে পড়াশোনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের স্কলারশিপ।

আজ আমরা অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপ পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানবো। 

(১) এনডেভার পোস্টগ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ
আবেদনের সময়: জুলাই/আগস্ট থেকে নভেম্বর

(২) মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ
সরকারি-বেসরকারি এসব শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া তেমনি একটি স্কলারশিপ হচ্ছে ‘গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ স্কলারশিপ’। ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেবে ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন। প্রতিবছর ৬০০ শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এ বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন আগ্রহীরা। প্রথম বছর ১০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার টিউশন ফি রিমিশন দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত যেকোনো বিষয়েই শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে আলাদাভাবে কোনো অ্যাপ্লিকেশন করতে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ার মধ্যেই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যাবে।

(৩) ডেকিন ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ
ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু ১৯৭৪ সালে। দেশটির ভিক্টোরিয়া শহরে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষার মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান সরকার ও বিভিন্ন  কোম্পানিতে পার্টনারশিপে কাজ করে। এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি গবেষণা ও কাজের সুযোগ পান। ৪০০টি বৃত্তি দেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়। উপবৃত্তি, সম্পূর্ণ টিউশন মুক্ত, চিকিৎসা তহবিল (অসুস্থ ছুটির বেতন দেওয়া), বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সেবা ও বিমান ভাড়া মিলবে এ বৃত্তি পেলে।

(৪) ইউনিভার্সিটি অব সিডনি ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ স্কলারশিপ
আবেদনের সময়: সারা বছরই খোলা থাকে তবে ভিন্ন ভিন্ন ডেডলাইন ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়

(৫)  আরটিপি স্কলারশিপ
আবেদনের সময়: সারা বছরই খোলা থাকে তবে ভিন্ন ভিন্ন ডেডলাইন ওয়েবসাইটে নোটিশের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।

(৬) অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বৃত্তি
দেশটির অন্যতম একটি বিশ্ববিদ্যালয় অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। প্রতিবছর স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে স্কলারশিপ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। ৩১ অক্টোবরের মধ্য আবেদন করতে হবে। প্রতি বছরে ৩৪ হাজার ডলার করে দেওয়া হবে এ বৃত্তির প্রাইজমানি। সাড়ে তিন বছর দেওয়া হবে এ বৃত্তি। তবে কতজনকে এ বৃত্তি দেওয়া হবে তা ওয়েবসাইটে উল্লেখ নেই।

(৭) বন্ড ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ
বন্ড বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। বছরের দুইবার এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে এ স্কলারশিপের জন্য।

(৮) ফ্লিনন্ডার্স ইউনিভার্সিটির আরটিপি স্কলারশিপ
রিসার্চ ট্রেনিং প্রোগ্রাম (আরটিপি নামে পরিচিত) অস্ট্রেলিয়ান সরকারের একটি উদ্যোগ। প্রতিবছর স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে বিভিন্ন ডিগ্রির জন্য এ স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। সাধারণত মাস্টার্সের জন্য তিন বছর ও পিএইচডির জন্য ২ বছরের আরটিপি স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। এর আওতায় সম্পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ, থাকার খরচ, মাসিক হাতখরচ, গবেষণামূলক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ-সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ৩৩ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার দেওয়া হয়।

(৯) জন অলরাইট ফেলোশিপ
আবেদনের সময়: ফেব্রুয়ারি থেকে জুন

(১০)অস্ট্রেলিয়া সরকারের বৃত্তি
অস্ট্রেলিয়া সরকারের ডেস্টিনেশন অস্ট্রেলিয়া বৃত্তি পাবেন ৫৫১ জন। প্রতি বছরে একজন শিক্ষার্থী পাবেন ১৫ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার।

(১১) তাসমানিয়া ইউনিভার্সিটির বৃত্তি
তাসমানিয়া ইউনিভার্সিটি প্রতিবছর স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে বৃত্তি দেয়। ১৫০টি বৃত্তি পাবেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা।

সুবিধা সমূহ:- 
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব স্কলারশিপগুলোর মধ্যে বেশ বৈচিত্র্য আছে। এগুলোতে প্রায় সরকারি অনুদানগুলোর কাছাকাছি সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোর্সগুলোর ভিত্তিতে প্রতি মাসে বা বছরে সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে থাকা-খাওয়ার খরচসহ নগদ অর্থের পরিমাণ কম-বেশি হয়। টিউশন ফি মওকুফ করা হয় শতকরা ১০ থেকে ৮০ ভাগ পর্যন্ত। গবেষণা কার্যক্রম শুরু করার জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সার্বিক ভ্রমণ ভাতা এবং থিসিস ভাতা প্রদান করে থাকে। এছাড়া রয়েছে  নির্ভরশীল শিশুর ভাতাসহ চিকিৎসা ভাতা, ম্যাটারনিটি এবং প্যাটারনিটি লিভ।

অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস-এ বলতে গেলে প্রায় সবকিছুই বিনা মূল্যে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে অস্ট্রেলিয়ার সরকার। এর মধ্যে রয়েছে দেশটিতে যাওয়ার জন্য বিমান ভাড়া ও ফিরতি টিকেট, পড়াশোনার সামগ্রিক খরচ, আবাসন ও খাওয়ার খরচসহ মাসিক নগদ অর্থ। এছাড়া নারী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে বিশেষ সুবিধা।

যোগ্যতাসমূহ:- 
অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ স্কলারশিপ দেওয়া হয় কেবলমাত্র স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি প্রোগামগুলোতে। প্রোগ্রামভেদে একেক রকম সুবিধা পাওয়া যায়। বেশির ভাগ স্কলারশিপ স্নাতকোত্তর পর্যায়ের হওয়াতে ব্যাচেলরের সনদ চাওয়া হয়ে থাকে। এখানে ভালো সিজিপি সহ একাডেমিক রেকর্ডের পাশাপাশি গুরুত্ব পায় ইংরেজি ভাষা দক্ষতা এবং টিউশন ফি চালানোর সক্ষমতার প্রমাণপত্র।

এছাড়া ভালো একাডেমিক ফলাফল , ইংরেজি ভাষা দক্ষতা এবং টিউশন ফি দেওয়ার সক্ষমতার প্রমাণ সবার আগে বিবেচ্য। পাশাপাশি আবেদনকারীর নির্বাচিত বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদিও গুরুত্ব রাখে। কিছু স্কলারশিপ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কার্যক্রম এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের রেকর্ডও সুবিধা হিসেবে কাজ করে। যে বিষয়ে স্নাতকোত্তরের জন্য আবেদন করা হয়েছে সে বিষয় সংলগ্ন কোন কাজে ন্যূনতম চার বছরের অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে। সর্বোপরি আবেদনের সাথে গবেষণার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার স্বপক্ষে ডেভেলপমেন্ট ইম্পেক্ট প্ল্যান প্রেরণ করতে হবে।
সামরিক পদে চাকরিরত কেউ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীরা আবেদন করতে পারবেন না।

আরও পড়ুন: ইতালির সেরা পাঁচ স্কলারশিপ

ভাষা দক্ষতার ক্ষেত্রে আইএলটিএস স্কোর কমপক্ষে ৬.৫ চেয়ে থাকে যেখানে মডিউলগুলোতে তথা রিডিং, রাইটিং, লিসেনিং ও স্পিকিং-এ ব্যান্ড স্কোর ন্যূনতম ৬ হতে হবে। তবে নারী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের আবেদনকারীরা আইইএলটিএস স্কোর ৬.০ দেখিয়ে আবেদন করতে পারবেন। আইইএলটিএস-এর পাশাপাশি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিই (পিয়ার্সন টেস্ট অফ ইংলিশ) চেয়ে থাকে, যার স্কোর হতে হয় ন্যূনতম ৫৮। টোফেল-এর পেপার বেজড টেস্টে কমপক্ষে ৫৮০ এবং কম্পিউটার বেজড টেস্টে কমপক্ষে ২৩৭ নম্বর পেতে হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া:- 
অস্ট্রেলিয়ায় স্কলারশিপের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পরেও শিক্ষার্থীকে স্টুডেন্ট ভিসায় আলাদা করে আবেদন করতে হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার জন্যই যে অস্ট্রেলিয়াতে যাওয়া হচ্ছে তা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এর পরেই আসে অস্ট্রেলিয়ায় যেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও থাকা-খাওয়ার খরচ বহনের আর্থিক সচ্ছলতার ব্যাপারটা।

শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অথবা স্কলারশিপের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনেই আবেদন করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে দেয়া নীতিমালা খুঁটিনাটি স্পষ্টভাবে অনুসরণ করতে হবে। প্রতিটি আবেদনের জন্য ব্যক্তিগত প্রোফাইল বা সিভি, স্টেটমেন্ট অফ পারপাস, রিকমেন্ডেশন লেটার গুরুত্বপূর্ণ নথি। এগুলোর নমুনা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই স্কলারশিপের বিজ্ঞপ্তি চলাকালীন আবেদন ফর্মের সাথেই সরবরাহ করা থাকে।

আবেদনপত্রের অংশে যাবার আগে কোন কোন ক্ষেত্রে আগেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটারের স্ক্রিনে আসা কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হতে পারে। সতর্কতার সঙ্গে সেগুলোর যথাযথ উত্তর প্রদানের মাধ্যমে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। অতঃপর প্রয়োজনীয় সকল নথির আপলোড করে অনলাইনের আবেদনের সার্বিক কাজ সম্পাদন করা যাবে।

আবেদন মঞ্জুর হওয়ার সাথে সাথে আবেদনের সময় প্রদত্ত শিক্ষার্থীর ইমেইলে তা জানিয়ে পরবর্তী নির্দেশনা পাঠানো হবে।

উন্নত শিক্ষা গ্রহণের আশায় অনেক শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য অস্ট্রেলিয়া। ভালো মানের পড়াশোনার পাশাপাশি দেশটিতে সরকারি বৃত্তির এমন সুযোগও রয়েছে যাতে পড়াশোনা তো বিনা মূল্যেই, বরং সরকার উল্টো টাকা দেবে মাসে মাসে। এসব শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করছেন।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *