# Tags
#অস্ট্রেলিয়ায় চাকুরী

অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা: স্কলারশিপের সঙ্গে খণ্ডকালীন চাকরিসহ নানা সুবিধা, জানুন বিস্তারিত

উদ্ভাবনশীলতা ও উৎপাদনশীলতার বাস্তবিক সন্নিবেশে নিহিত থাকে একটি দেশের সমৃদ্ধির রূপকল্প। এই মেলবন্ধন গঠনের একদম অঙ্কুরে কাজ করে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেবল অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন নাগরিকদের জন্য একটি জায়গা নয়, বরং উন্নত দেশ গঠনে দক্ষ কর্মীর মূল জোগানদাতা। যুগের সেরা সব মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটিয়ে ঠিক এ তত্ত্বেরই ব্যবহারিক রূপ দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ওশেনিয়া মহাদেশের এ বৃহত্তম ভূখণ্ডে যুগ যুগ ধরে চলছে বিশ্বের সর্বোচ্চ মানের শিক্ষাচর্চা। পড়াশোনার জন্য বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী মেধাবীর কাছেই দেশটি এখন পছন্দে প্রথমের দিকে। চলুন, অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, জীবনযাত্রার খরচ ও স্কলারশিপ–সংক্রান্ত যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

কেন অস্ট্রেলিয়া সেরা গন্তব্য—

কিউএস ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্কিংয়ে ২০২৫ সালের জন্য শীর্ষ ১০ শিক্ষার্থীবান্ধব নগরীর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন (৫) ও সিডনি (৬)। জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেশি থাকা সত্ত্বেও এই মেগাসিটি দুটিতে অনায়াসেই জায়গা করে নিচ্ছেন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। তা ছাড়া দুটি শহরসহ আরও বেশ কয়েকটি শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবছরই থাকে কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে। ২০২৪-এ প্রথম অর্ধশতকের মধ্যে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো: ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন (১৩), ইউনিভার্সিটি অব সিডনি (১৮), ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস (১৯), অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (৩০), মোনাশ ইউনিভার্সিটি (৩৭) ও ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড (৪০)।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমন র‍্যাঙ্কিংয়ে থাকার অন্যতম কারণ হলো এগুলোর প্রতিটি দুইয়ের অধিক বিষয়ের পাঠদানের জন্য সেরা। প্রকৌশল, প্রযুক্তি, মেডিসিন, কলা ও মানবিকের নাম করলে প্রায়ই ঘুরেফিরে এই বিদ্যাপীঠগুলোর নাম আসে।

বিশ্বের ১৩তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ অস্ট্রেলিয়া। এর ফলে দেশটির নাগরিকেরা উন্নত মানের অবকাঠামো, আধুনিকতা ও সর্বোচ্চ মানের স্বাস্থ্যসেবার মতো সুবিধাগুলো পেয়ে থাকেন। সব মিলিয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার গঠনে উন্নয়নশীল দেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য অস্ট্রেলিয়া নিঃসন্দেহে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।

সেরা বিশ্ববিদ্যালয় কোনগুলো:·ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন, ইউনিভার্সিটি অব সিডনি, ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, মোনাশ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া, ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেড, ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি, আরএমআইটি ইউনিভার্সিটি।

সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন বিষয় কোনোগুলো: অ্যাকাউন্টিং, অ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্স, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি, সাইকোলজি, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, আর্কিটেকচার, ইঞ্জিনিয়ারিং, হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড নার্সিং, বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট।

আবেদনের সময় কবে: বছরজুড়ে সাধারণত তিনটি মৌসুমে ভর্তির জন্য আবেদন গ্রহণ করে থাকে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। মৌসুমগুলো ফেব্রুয়ারি, জুলাই ও নভেম্বর ইনটেক হিসেবে পরিচিত। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক কোর্সে ভর্তির সুযোগ থাকে ফেব্রুয়ারি ইনটেকে। ভর্তি কার্যক্রম চলে ফেব্রুয়ারি বা মার্চ থেকে শুরু করে মে মাসের শেষ বা জুনের শুরু পর্যন্ত। আবেদন গ্রহণ করা হয় আগের বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে। ইন্টার্নশিপ বা কর্মসংস্থান পাওয়ার ক্ষেত্রে এই মৌসুমই সর্বাধিক উপযুক্ত। জুলাই ইনটেকের আবেদন নেওয়া হয় এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত। অতঃপর ভর্তি শুরু হয় জুলাইয়ের শেষ বা আগস্টের শুরুর দিকে। তারপর নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ছাত্রছাত্রী ভর্তি। সর্বশেষ নভেম্বর ইনটেকে আবেদনের সময় সেপ্টেম্বর মাস। ভর্তিপ্রক্রিয়া চলমান থাকে নভেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত।

প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অনলাইন পোর্টালে আবেদন করা যায়। মৌসুমগুলোকে কেন্দ্র করে ওয়েবসাইটগুলোতে ভর্তির শর্ত, কোর্সের পর্যাপ্ততা ও আবেদনের সময়সীমা হালনাগাদ করা হয়। তাই অনলাইন আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অন্য বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জানতে প্ল্যাটফর্মগুলোতে চোখ রাখা উচিত।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র—

  • অনলাইন আবেদনপত্র
  • একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট এবং সার্টিফিকেট: স্নাতকের ক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিকের নথি, স্নাতকোত্তরের জন্য স্নাতকের নথি এবং পিএইচডির জন্য স্নাতকোত্তরের শংসাপত্র
  • ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রমাণপত্র: ন্যূনতম যোগ্যতা স্বরূপ আইইএলটিএস স্কোর ৬, টোয়েফেল আইবিটিতে ৬৪, কেমব্রিজ ইংলিশ: অ্যাডভান্সডে ১৬৯, বা পিটিই (পিয়ারসন টেস্ট অব ইংলিশ) একাডেমিক-এ ৫০।
  • সিভি বা পোর্টফোলিও
  • এসওপি (স্টেটমেন্ট অব পার্পাস) বা পার্সোনাল স্টেটমেন্ট
  • লেটার অব রিকমেন্ডেশন (এলওআর)
  • রিসার্চ প্রপোজাল (ডক্টরাল প্রোগ্রামের জন্য)
  • পেশাগত অভিজ্ঞতাপত্র (এমবিএ প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে)
  • বৈধ পাসপোর্ট
  • সাম্প্রতিক ছবি
  • অধ্যয়ন ফির জন্য আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণের জন্য কমপক্ষে কোর্সের প্রথম ১২ মাসের ফি। কোর্স ১২ মাস বা এর কম হলে সম্পূর্ণ ফি পরিশোধ করতে হবে।
  • স্বাস্থ্যবিমাস্বরূপ ওএসএইচসি (ওভারসিজ স্টুডেন্ট হেলথ কভার)
  • আবেদন ফি: সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা ৪ হাজার ৯৩ থেকে ৮ হাজার ১৮৫ টাকা (১ অস্ট্রেলিয়ান ডলার= ৮১ দশমিক ৮৫ বাংলাদেশি টাকা)।

এর বাইরেও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নথি চাওয়া হতে পারে। কোনো কাগজ বাংলায় হলে তা অবশ্যই ইংরেজিতে অনুবাদ করে মূল কপিসহ অনূদিত কপি স্ক্যান করতে হবে। এখানে অনুবাদককে অবশ্যই জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হতে হবে।

স্টুডেন্ট ভিসায় আবেদন পদ্ধতি—

স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের মতো কোর্সগুলোতে অধ্যয়নের অনুমতি দেয় অস্ট্রেলিয়ার সাবক্লাস ৫০০ স্টুডেন্ট ভিসা। এখানে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দসই বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। এ ভিসার আবেদন অফলাইন ও অনলাইন দুই মাধ্যমেই করা যায়। আবেদনের পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করার জন্য দুটো প্ল্যাটফর্ম আছে। অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র বিভাগের ওয়েবসাইটের অন্তর্ভুক্ত ইমি পোর্টাল (https://online.immi.gov.au/lusc/register) ও ভিএফএস (ভিসা ফ্যাসিলিটেশন সার্ভিসেস) গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম (https://visa.vfsglobal.com/bgd/en/aus/register)।

যেকোনো একটিতে অ্যাকাউন্ট খুলে আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু করা যায়। তবে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য অবশ্যই ভিএফএস সাইটের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়। উভয় ক্ষেত্রেই আবেদনের জরুরি কাগজপত্র আপলোডসহ আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *