অস্ট্রেলিয়াতে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ

উদ্ভাবনশীলতা ও উৎপাদনশীলতার বাস্তবিক সন্নিবেশে নিহিত থাকে একটি দেশের সমৃদ্ধির রূপকল্প। এই মেলবন্ধন গঠনের একদম অঙ্কুরে কাজ করে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেবল অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন নাগরিকদের কারখানাই নয়, বরং উন্নত দেশ গঠনের জন্য দক্ষ কর্মীর মূল যোগানদাতা। যুগের সেরা সব মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটিয়ে ঠিক এই তত্ত্বটিরই ব্যবহারিক রূপ দান করেছে অস্ট্রেলিয়া। ওশেনিয়া মহাদেশের এই বৃহত্তম ভূ-খণ্ডে যুগ যুগ ধরে চলছে বিশ্বের সর্বোচ্চ মানের শিক্ষা চর্চা। পড়াশোনার জন্য বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী মেধাবীদের কাছেই দেশটি এখন প্রথম পছন্দ। চলুন, অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, জীবনযাত্রার খরচ, ও স্কলারশিপ সংক্রান্ত যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কেন অস্ট্রেলিয়া উচ্চশিক্ষার অন্যতম সেরা গন্তব্য
কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং-এ ২০২৫ সালের জন্য শীর্ষ ১০ শিক্ষার্থীবান্ধব নগরীর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন (৫) ও সিডনি (৬)। অর্থাৎ জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেশি থাকা সত্ত্বেও এই মেগাসিটি দুটোতে অনায়াসেই জায়গা করে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা।
তাছাড়া এ দুটো শহরসহ আরও বেশ কয়েকটি শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতি বছরই থাকে কিউএস র্যাংকিং-এ। যেমন ২০২৪-এ প্রথম অর্ধশতকের মধ্যে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:
· ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন (১৩)
· ইউনিভার্সিটি অব সিডনি (১৮)
· ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস (১৯)
· অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (৩০)
· মোনাশ ইউনিভার্সিটি (৩৭)
· ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড (৪০)
আরো পড়ুন: সুইডেনে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমন উচ্চ র্যাংকিং-এ থাকার অন্যতম প্রধান কারণ হলো এগুলোর প্রত্যেকটি দুইয়ের অধিক বিষয়ের পাঠদানের জন্য সেরা। প্রকৌশল, প্রযুক্তি, মেডিসিন, কলা ও মানবিকের নাম করলে প্রায়শই ঘুরে ফিরে এই বিদ্যাপীঠগুলোর নাম আসে।
উদ্ভাবনশীলতা নিয়ে ওশেনিয়ার এই দ্বীপ দেশটির রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা পরবর্তীতে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। বিগত কয়েক যুগে বিশ্বসেরা বিজ্ঞানী, ডিজাইনার, শিক্ষাবিদ ও উদ্যোক্তাদের একটা বিরাট অংশ ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী।
বিশ্বের ১৩তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ অস্ট্রেলিয়া। এর ফলেই দেশটির নাগরিকরা উন্নত মানের অবকাঠামো, আধুনিকতা ও সর্বোচ্চ মানের স্বাস্থ্যসেবার মতো সুবিধাগুলো পেয়ে থাকে। সব মিলিয়ে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার গঠনে উন্নয়নশীল দেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য অস্ট্রেলিয়া নিঃসন্দেহে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।
আরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, স্টুডেন্ট ভিসা, স্কলারশিপ ও আনুষঙ্গিক খরচ
অস্ট্রেলিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাহিদা সম্পন্ন কোর্সের তালিকা
বিশ্বজুড়ে বহুল সমাদৃত অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো:
· ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন
· ইউনিভার্সিটি অব সিডনি
· ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস
· অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
· মোনাশ ইউনিভার্সিটি
· ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড
· ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া
· ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেড
· ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি
· আরএমআইটি ইউনিভার্সিটি
আরো পড়ুন: ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন, পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনার জন্য সর্বাধিক চাহিদাসম্পন্ন বিষয়:
· অ্যাকাউন্টিং
· অ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্স
· কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ফরমেশন টেকনোলজি
· সাইকোলজি
· ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট
· আর্কিটেক্চার
· ইঞ্জিনিয়ারিং
· হেল্থ সায়েন্স অ্যান্ড নার্সিং
· বিজনেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট
আরো পড়ুন: পোল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন, পড়াশোনার খরচ, ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আবেদনের উপায়
বছর জুড়ে সাধারণত তিনটি মৌসুমে ভর্তির জন্য আবেদন গ্রহণ করে থাকে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। মৌসুমগুলো ফেব্রুয়ারি, জুলাই ও নভেম্বর ইন্টেক হিসেবে পরিচিত।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কোর্সে ভর্তির সুযোগ থাকে ফেব্রুয়ারি ইন্টেকে। ভর্তি কার্যক্রম চলে ফেব্রুয়ারি বা মার্চ থেকে শুরু করে মে মাসের শেষ বা জুনের শুরু পর্যন্ত। আবেদন গ্রহণ করা হয় আগের বছরের অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে। ইন্টার্নশিপ বা কর্মসংস্থান পাওয়ার ক্ষেত্রে এই মৌসুমটিই সর্বাধিক উপযুক্ত।
জুলাই ইন্টেকের আবেদন নেওয়া হয় এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত। অতঃপর ভর্তি শুরু হয় জুলাইয়ের শেষ বা আগস্টের শুরুর দিকে। তারপর নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে ছাত্রছাত্রী ভর্তি।
সর্বশেষ নভেম্বর ইন্টেকে আবেদনের সময় সেপ্টেম্বর মাস। ভর্তি প্রক্রিয়া চলমান থাকে নভেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত।
এই আবেদনের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে নিজস্ব অনলাইন পোর্টাল। মৌসুমগুলোকে কেন্দ্র করে এই ওয়েবসাইটগুলোতে ভর্তির যাবতীয় শর্ত, কোর্সের পর্যাপ্ততা ও আবেদনের সময়সীমা হালনাগাদ করা হয়। তাই অনলাইন আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অন্যান্য বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জানতে প্লাটফর্মগুলোতে চোখ রাখা উচিত।
আরো পড়ুন: চীনে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
ভর্তির আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
· অনলাইন আবেদনপত্র
· একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট এবং সার্টিফিকেট: স্নাতকের ক্ষেত্রে উচ্চ মাধ্যমিকের নথি, স্নাতকোত্তরের জন্য স্নাতকের নথি এবং পিএইচডির জন্য স্নাতকোত্তরের শংসাপত্র
· ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রমাণপত্র: ন্যূনতম যোগ্যতা স্বরূপ আইইএলটিএস স্কোর ৬, টোফেল আইবিটিতে ৬৪, কেম্ব্রিজ ইংলিশ: অ্যাড্ভান্স্ড-এ ১৬৯, বা পিটিই (পিয়ারসন টেস্ট অব ইংলিশ) একাডেমিক-এ ৫০।
· সিভি বা পোর্টফোলিও
· এসওপি (স্টেটমেন্ট অব পার্পাস) বা পার্সনাল স্টেটমেন্ট
· লেটার অব রিকমেন্ডেশন (এলওআর)
· রিসার্চ প্রোপোজাল (ডক্টরাল প্রোগ্রামের জন্য)
· পেশাগত অভিজ্ঞতাপত্র (এমবিএ প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে)
· বৈধ পাসপোর্ট
· সাম্প্রতিক ছবি
· অধ্যয়ন ফি প্রদানের জন্য আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ: কমপক্ষে কোর্সের প্রথম ১২ মাসের ফি। কোর্স ১২ মাস বা তার কম হলে সম্পূর্ণ ফি পরিশোধ করতে হবে।
· স্বাস্থ্য বীমা স্বরূপ ওএসএইচসি (ওভারসিজ স্টুডেন্ট হেলথ কভার)
· আবেদন ফি: সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার বা ৪ হাজার ৯৩ থেকে ৮ হাজার ১৮৫ টাকা (১ অস্ট্রেলিয়ান ডলার = ৮১ দশমিক ৮৫ বাংলাদেশি টাকা)
আরো পড়ুন: ফিনল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ, ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
এর বাইরেও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নথি চাওয়া হতে পারে। কোনো কাগজ বাংলায় হলে তা অবশ্যই ইংরেজিতে অনুবাদ করে মূল কপিসহ অনুদিত কপি স্ক্যান করতে হবে। এখানে অনুবাদককে অবশ্যই জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হতে হবে।
অস্ট্রেলিয়াতে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন পদ্ধতি
স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের মতো দীর্ঘমেয়াদী কোর্সগুলোতে অধ্যয়নের অনুমতি দেয় অস্ট্রেলিয়ার সাবক্লাস ৫০০ স্টুডেন্ট ভিসা। এখানে সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা নিজেদের পছন্দসই বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারে।
এই ভিসার আবেদনের জন্য অফলাইন ও অনলাইন দুই মাধ্যমেই রয়েছে। তবে সবচেয়ে নিরবচ্ছিন্ন উপায় হচ্ছে অনলাইন আবেদন। এই মাধ্যমে মূলত পাসপোর্টে কোনো সিল দেওয়া হয় না। ভিসাকে পাসপোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় ডিজিটালভাবে।
আবেদনের পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করার জন্য দুটো প্ল্যাটফর্ম আছে।
· অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র বিভাগের ওয়েবসাইটের অন্তর্ভুক্ত ইমি পোর্টাল (https://online.immi.gov.au/lusc/register)
· ভিএফএস (ভিসা ফ্যাসিলিটেশন সার্ভিসেস) গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম (https://visa.vfsglobal.com/bgd/en/aus/register)
এগুলোর যে কোনো একটিতে অ্যাকাউন্ট খোলার মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। তবে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য অবশ্যই ভিএফএস সাইটের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়। উভয় ক্ষেত্রেই আবেদনের জরুরি কাগজপত্র আপলোডসহ আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়।
আরো পড়ুন: কীভাবে আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করবেন?
ভিসার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
· বৈধ পাসপোর্টের সঙ্গে জন্ম সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র বা ড্রাইভার লাইসেন্সের প্রত্যয়িত অনুলিপি
· অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীর জন্য জারি করা ভর্তির অফার লেটার
· স্বাস্থ্য বীমা হিসাব ওএসএইচসি: বীমার মূল্যমান ন্যূনতম বার্ষিক ১ হাজার ডলার বা ৮১ হাজার ৮৫০ টাকা
· শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট এবং সনদপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেফারেন্স বা রিকমেন্ডেশন লেটারের প্রত্যয়িত অনুলিপি)
· পিএইচডির জন্য থিসিস বা রিসার্চ প্রোপোজাল; সাথে সিভি
· আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমাণ: জীবনযাত্রার খরচ বাবদ ১২ মাসের জন্য ২৯ হাজার ৭১০ ডলার (২৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৭২ টাকা), ভ্রমণ খরচ ২ হাজার ডলার (১ লাখ ৬৩ হাজার ৭০০ টাকা)। এর প্রমাণ স্বরূপ নিজের নামে থাকা ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রদর্শন করতে হবে।
· শিক্ষার্থী নিজেই এই খরচ বহন করলে তার আয়ের উৎস হিসেবে কর্মসংস্থানের প্রমাণ: চাকরীজীবী হলে, চাকরীর বেতন, পদবী ও সময়কাল উল্লেখপূর্বক নিয়োগকর্তার নিকট থেকে কর্মসংস্থান শংসাপত্র।
· কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ তুলে থাকলে তার বিস্তারিত চুক্তিনামা
· স্কলারশিপের ক্ষেত্রে স্কলারশিপ প্রদানকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিবৃতি পত্র
· এছাড়া অন্য কেউ আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকলে যে তথ্যগুলো দিতে হবে, তা হলো-
· অর্থ সহায়তা প্রদানকারীর সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্কের প্রমাণ
· তাদের পরিচয় নথি
· আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রমাণপত্র
· স্বাস্থ্য শংসাপত্র
· অস্ট্রেলিয়ান ভ্যালু স্টেটমেন্টে সই বা সম্মতি প্রদান
আরো পড়ুন: রোমানিয়ায় উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
প্রত্যেকটি নথির মূল এবং অনুলিপি উভয় কপির রঙিন ও স্পষ্ট স্ক্যান করতে হবে যেন তা সহজে পাঠযোগ্য হয়। কোনো নথি একের অধিক পৃষ্ঠার হলে সবগুলোকে ১টি ফাইলে নিতে হবে।
পরিচয়ের নথিগুলো প্রতিটি অনুর্ধ্ব ৫০০ কিলোবাইট আর বাকি নথিগুলোর প্রতিটি সর্বোচ্চ ৫ মেগাবাইট পর্যন্ত হতে পারবে।
বায়োমেট্রিক নিবন্ধন
ভিসা কেন্দ্রে যাওয়ার আগে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য https://visa.vfsglobal.com/bgd/en/aus/register- এই লিংকে যেয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। যারা এর আগে ভিসা আবেদনের জন্য এই সাইট ব্যবহার করেছেন তাদের আর নতুন করে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে না। শুধু সাক্ষাৎকারের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং দিলেই হবে। ই-মেইলের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের জন্য নির্দিষ্ট দিনক্ষণ জানিয়ে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দেওয়া হবে। এই লেটারটি প্রিন্ট করে সেই নির্দিষ্ট সময়ানুযায়ী পাসপোর্ট ও ভিসা আবেদনের যাবতীয় নথি সহকারে কন্স্যুলেটর অফিসে যেতে হবে। এগুলোর কোনোটিই অফিসে রেখে দেওয়া হবে না। কেবল প্রার্থীকে তাৎক্ষণিক যাচাইয়ের জন্য দরকার হবে।
ঢাকা ভিএফএস ঠিকানা: ডেল্টা লাইফ টাওয়ার (৪র্থ তলা), প্লট নম্বর ৩৭, রোড নম্বর ৪৫ ও ৯০, গুলশান উত্তর বাণিজ্যিক এলাকা, গুলশান সার্কেল ২, ঢাকা-১২১২।
চট্রগ্রামের ভিএফএস ঠিকানা: ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার চট্টগ্রাম, (৫ম তলা), ১০২/১০৩ আগ্রাবাদ সিএ, কমার্স কলেজ রোড, চট্টগ্রাম-৪১০০।
সিলেট ভিএফএস ঠিকানা: মার্চেন্ট টাওয়ার, ২য় তলা, পূর্ব মীরাবাজার, সিলেট-৩১০০।
আরো পড়ুন: আয়ারল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের পদ্ধতি, খরচ, স্কলারশিপ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় এবং আনুষঙ্গিক খরচ
আবেদন জমা দেওয়ার পর থেকে নিয়মিত ইমি অ্যাকাউন্ট বা ভিএফএস অ্যাকাউন্ট চেক করা জরুরি। কেননা যদি কোনো অতিরিক্ত তথ্য বা নথির প্রয়োজন হয় তবে এই অ্যাকাউন্টে বা ই-মেইলের মাধ্যমে জানানো হবে। এ সময় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আরও কিছু কাগজপত্র প্রদানের প্রয়োজন হতে পারে। এগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা জরুরি হচ্ছে পুলিশ সার্টিফিকেট।
এছাড়া চরিত্র মূল্যায়নের জন্য ব্যক্তিগত বিবৃতি স্বরূপ দুটি ফর্ম পূরণ করতে বলা হতে পারে।
· ফর্ম নং ৮০ (https://immi.homeaffairs.gov.au/form-listing/forms/80.pdf)
· ফর্ম নং ১৫৬৩ (https://immi.homeaffairs.gov.au/form-listing/forms/1563.pdf)
এই প্রক্রিয়ায় ভিসার প্রায় ৯০ শতাংশ প্রস্তুত হতে সাধারণত ৪ মাস সময় লেগে যায়।
সাবক্লাস ৫০০ স্টুডেন্ট ভিসা ফি ১ হাজার ৬০০ ডলার কিংবা ১ লাখ ৩০ হাজার ৯৬০ টাকা। এটি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে। বায়োমেট্রিক নিবন্ধন ফি ২ হাজার ১৫৫ টাকা সরাসরি ভিএফএস সেন্টারে নগদে জমা দিতে হবে।
আরো পড়ুন: অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও স্কলারশিপসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার সম্ভাব্য খরচ
উচ্চ অধ্যয়ন ফির দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। এখানে স্নাতক ডিগ্রির জন্য বাজেট রাখতে হবে ২০ থেকে ৪৫ হাজার ডলার, যা প্রায় ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬ থেকে ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ২৬৩ টাকা। ২২ থেকে ৫০ হাজার ডলারের (১৮ লাখ ৭০৬ থেকে ৪০ লাখ ৯২ হাজার ৫১৪ টাকা) ব্যয়ভার রয়েছে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামগুলোতে। আর ডক্টরাল ডিগ্রিতে খরচ হয় প্রায় ১৮ থেকে ৪২ হাজার ডলার (১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৩০৫ থেকে ৩৪ লাখ ৩৭ হাজার ৭১২ টাকা)।
জীবনযাত্রার খরচের দিক থেকেও অস্ট্রেলিয়া যথেষ্ট ব্যয়বহুল। আবাসনে সবচেয়ে কমের মধ্যেই ক্যাম্পাস ডরমিটরির ভাড়া ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ ডলার (৬৫ হাজার ৪৮০ থেকে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৯০ টাকা)। শেয়ার্ড অ্যাপার্টমেন্টে দিতে হয় ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ডলার (৪৯ হাজার ১১০ থেকে ৯৮ হাজার ২২০ টাকা)। আর স্থানীয় পরিবারের সাথে থাকার ক্ষেত্রে ভাড়া ১ থেকে ১ হাজার ৪০০ ডলার (৮১ হাজার ৮৫০ থেকে ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৯০ টাকা)।
এছাড়া প্রতি মাসে খাবার ও মুদির জন্য বাজেট রাখতে হবে ৬৫ থেকে ১০৩ ডলার বা ৫ হাজার ৩২০ থেকে ৮ হাজার ৪৩১ টাকা। যাতায়াত বাবদ খরচ ৩ থেকে ৪০০ ডলার (২৪ হাজার ৫৫৫ থেকে ৩২ হাজার ৭৪০ টাকা)। বিদ্যুৎ, গ্যাস, মোবাইল, ও ইন্টারনেট সহ ইউটিলিটি বাজেট ২৭০ থেকে ৪৯০ ডলার (২২ হাজার ১০০ থেকে ৪০ হাজার ১০৭ টাকা)।
আরো পড়ুন: চেক প্রজাতন্ত্রে উচ্চশিক্ষা: পড়াশোনার খরচ ও স্কলারশিপসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
তবে বিভিন্ন শহরের ওপর ভিত্তি করে এই গড় বাজেটে বেশ তারতম্য ঘটে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধান কিছু শহরের জীবনযাত্রার খরচ নিম্নরূপ-
· ক্যানবেরা: ৪ হাজার ৩১০ ডলার (৩ লাখ ৫২ হাজার ৭৭৫ টাকা)
· সিডনি: ৩ হাজার ৯৮২ ডলার (৩ লাখ ২৫ হাজার ৯২৮ টাকা)
· মেলবোর্ন: ৩ হাজার ৭৭৮ ডলার (৩ লাখ ৯ হাজার ২৩০ টাকা)
· পার্থ: ৩ হাজার ৭৭৪ ডলার (৩ লাখ ৮ হাজার ৯০৩ টাকা)
· ব্রিস্বেন: ৩ হাজার ৭২৬ ডলার (৩ লাক ৪ হাজার ৯৭৪ টাকা)
· হোবার্ট: ৩ হাজার ৬১৪ ডলার (২ লাখ ৯৫ হাজার ৮০৭ টাকা)
· অ্যাডিলেড: ৩ হাজার ৫০২ ডলার (২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৪০ টাকা)
আরো পড়ুন: হাঙ্গেরিতে উচ্চশিক্ষা: আবেদনের উপায়, পড়াশোনার খরচ, স্কলারশিপ, ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
অস্ট্রেলিয়াতে স্কলারশিপের সুবিধা
এই ব্যয়বহুল অধ্যয়ন এবং জীবনযাত্রার অর্থ সঙ্কুলানের উৎকৃষ্ট মাধ্যম হলো স্কলারশিপগুলো। যেমন- মেলবোর্ন ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারগ্রাজুয়েট স্কলারশিপ স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। এখানে প্রথম বছরের জন্য ১০ হাজার ডলার (৮ লাখ ১৮ হাজার ৫০৩ টাকা) অধ্যয়ন ফি ছাড় পাওয়া যায়।
মোনাশ ইন্টার্ন্যাশনাল লিডারশিপ স্কলারশিপ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরতদের জন্য। এখানে প্রোগ্রামের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেডিট পয়েন্ট নির্ধারিত থাকে, যেটি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত শতভাগ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
ইউটিএস ভাইস-চ্যান্সেলরের ইন্টার্ন্যাশনাল স্কলারশিপ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের ৫০ শতাংশ ব্যয়ভার গ্রহণ করে থাকে।
গ্লোবাল একাডেমিক এক্সিলেন্স স্কলারশিপে (ইন্টার্ন্যাশনাল) প্রতিটি অনুষদে অসামান্য একাডেমিক ফলাফল অর্জনকারীদের অধ্যয়ন খরচ থেকে ৫০ শতাংশ মওকুফ করা হয়।
আরো পড়ুন: ফ্রান্সে উচ্চশিক্ষা: আবেদন পদ্ধতি, খরচ ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা
পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির সুযোগ
সাবক্লাস ৫০০ স্টুডেন্ট ভিসার একটি প্রধান সুবিধা হলো- সেমিস্টার চলাকালে প্রতি ২ সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজ করা যায়। তবে অস্ট্রেলিয়ায় কাজের ক্ষেত্রে পূর্ণ বৈধতা পেতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অবশ্যই টিএফএন (ট্যাক্স ফাইল নাম্বার) নিতে হবে। কেননা বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের যাদের অস্ট্রেলিয়াতে বসবাসের ৬ মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে তাদের অবশ্যই আয়কর দিতে হয়।
কাজের অবস্থান, অভিজ্ঞতা ও কাজের ধরনের ওপর ভিত্তি করে চাকরির মজুরি ভিন্ন হয়ে থাকে। বিশেষ করে সিডনি, মেলবোর্ন, বা পার্থের মতো অভিজাত শহরে মজুরির পরিমাণ অন্যান্য শহরগুলোর তুলনায় বেশি।
ঘণ্টাপ্রতি মজুরিসহ অস্ট্রেলিয়ায় জনপ্রিয় কিছু খণ্ডকালীন চাকরির তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো-
ক্যাম্পাসের ভেতরের চাকরি
· পিয়ার টিউটরিং: ২৯ দশমিক ৪৫ ডলার (২ হাজার ৪১১ টাকা)
· গবেষণা সহকারী: ৩০ ডলার (২ হাজার ৪৫৬ টাকা)
· শিক্ষকতা সহকারী: ৩৮ দশমিক ৪০ ডলার (৩ হাজার ১৪৩ টাকা)
· লাইব্রেরিয়ান: ২৭ ডলার (২ হাজার ২১০ টাকা)
· বারিস্তা: ২২ ডলার (১ হাজার ৮০১ টাকা)
· বিক্রয় সহকারী: ৩০ ডলার (২ হাজার ৪৫৬ টাকা)
আরো পড়ুন: ডুওলিঙ্গো ইংলিশ টেস্ট কী? কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
ক্যাম্পাসের বাইরের চাকরি
· খুচরা বিক্রেতা: ২৪ দশমিক ৭৬ ডলার (২ হাজার ২৭ টাকা)
· জ্বালানি পাম্প বা গ্যাস স্টেশন: ২২ দশমিক ৪২ ডলার (১ হাজার ৮৩৫ টাকা)
· নির্মাণ সাইট: ৫০ ডলার (৪ হাজার ৯৩ টাকা)
· ডেলিভারি ড্রাইভার: ৩০ দশমিক ৮৮ ডলার (২ হাজার ৫২৮ টাকা)
· পেট সিটার: ২২ ডলার (১ হাজার ৮০১ টাকা)
· ট্রান্স্লেটর: ২৫ দশমিক ৮৭ ডলার (২ হাজার ১১৭ টাকা)
আরো পড়ুন: টোফেল পরীক্ষার নিবন্ধন করবেন যেভাবে
শেষাংশ
সর্বোচ্চ মানের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করায় সঙ্গত কারণেই অস্ট্রেলিয়ার উচ্চশিক্ষা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। তাই এই অসামান্য সুযোগ লাভের জন্য স্কলারশিপ অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। এর প্রথম শর্ত হিসেবে স্নাতকের জন্য উচ্চ মাধ্যমিকে এবং স্নাতকোত্তরের জন্য স্নাতকে দুর্দান্ত ফলাফল অর্জন করা জরুরি। পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা দক্ষতার পরীক্ষাতেও গড়পড়তার থেকে বেশি স্কোর থাকা উচিত। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করার পর অফার লেটার চলে আসলে স্টুডেন্ট ভিসাপ্রাপ্তির কাজটা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। বাকি থাকে শুধু সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রতিটি কাগজপত্র জমা দেওয়া। বিশেষ করে আর্থিক ও আইনি নথিপত্রের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে দ্রুত সময়ে ভিসা পাওয়া সম্ভব হবে।