অস্ট্রেলিয়ায় যেভাবে চাকরি খুঁজতে হয়

অস্ট্রেলিয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাকরির জন্যে প্রকাশ্যে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না। তাই এদেশে চাকরি খুঁজে পেতে অস্ট্রেলিয়ান শ্রম বাজার সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখা অপরিহার্য। এবং শুধুমাত্র গতানুগতিক চাকরির বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে, সক্রিয়ভাবে সুযোগ খুঁজে নেয়ার উপায় অন্বেষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই সম্ভাব্য চাকরির বাজার উন্মোচন করা এবং অভিবাসী কর্মসংস্থান পরিষেবাগুলির সাথে নিজেকে পরিচিত করা, আপনার চাকরি অনুসন্ধান প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এদের সহায়তায় সঠিক তথ্য ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আরও দ্রুত নিজের জন্যে কর্মসংস্থান সুরক্ষিত করার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারেন।
চাকরি খোঁজা খুব সহজ কোনো কাজ নয়।
অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানোর পরপরই অবিলম্বে আপনার ওয়ার্ক রাইটস বা কাজ করার অধিকার সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং সক্রিয়ভাবে কাজের সুযোগ খোঁজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক এমনটাই পরামর্শ দিয়েছেন এনবি মাইগ্রেশন ল নামক সংস্থার প্রধান আইনজীবী অ্যাগনেস কেমেনেস।
চাকরির খোঁজ শুরু করতে সিক ডট কম, ক্যারিয়ারওয়ান এবং জোরার মতো কর্মসংস্থান ওয়েবসাইটগুলি খুবই কার্যকরী। সেই সাথে লিংকডইনের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও উপলভ্য কাজের ধরণ এবং চাহিদাযুক্ত খাত কী কী রয়েছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারে।
মিজ কেমেনেস বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই নিয়োগ ও চাকরি খুঁজে দেয় এরকম সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা সহায়ক হতে পারে।
“প্রচলিত উপায়ে চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এদেশে প্রত্যাশিত চাকরি পেতে হলে বিকল্প উপায় অবলম্বন করা দরকার হতে পারে।”
যেহেতু অনেক চাকরির খবরই বিজ্ঞাপিত হয় না, তাই কাজ পেতে হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত নিয়োগকর্তা এবং সংস্থা বা এজেন্সিগুলির সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে সক্রিয়ভাবে নিজের নেটওয়ার্ক বা পরিচিতির গন্ডি প্রসারিত করা জরুরি।
এই পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফেসবুকে আপনার পরিচিত মানুষদের মধ্যে চাকরির সুযোগ নিয়ে আলাপ করা, কারণ অনেকেই এখন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়ে ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থী খুঁজে নিতে চায়।
প্রয়োজন হলে আপনি বেশ কয়েকটি অভিবাসী এবং শরণার্থী কর্মসংস্থান পরিষেবার সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন।
এদেশে আগমনের পরে নতুন অভিবাসীদের সাধারণত রেফিউজি অ্যান্ড অ্যাসাইলাম সিকারস এমপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রামস এর মাধ্যমে এসএসআইয়ের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হয়।
এসএসআই আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা ও কাজের দক্ষতা মূল্যায়ন করে এবং পেশা নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী সে-বিষয়গুলি বিবেচনা করে। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থীরা অস্ট্রেলিয়ার মান অনুযায়ী নিজেদের রেজিউমি বা জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করা শিখতে পারে এবং চাকরির বাজার সম্পর্কে আরও গভীর ধারণা অর্জন করতে পারে।
মিজ লাজাকানি ব্যাখ্যা করে বলেন যে আপনি যদি এদেশে আসার আগে অন্য কোনো পেশায় নিযুক্ত থাকেন, তাহলে এসএসআই কীভাবে সেই পেশাটি অস্ট্রেলিয়ায় উপলব্ধ সুযোগের সাথে কাজে লাগতে পারে সে-সম্পর্কে দিকনির্দেশনা সরবরাহ করতে পারে।
এসএসআই চাকরিপ্রার্থীদের স্থানীয় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা কার্যকরভাবে উপস্থাপন এবং বাজারজাত করতে সাহায্য করে। এই সহায়তার মূল লক্ষ্য হলো স্থানীয় চাকরির বাজারে নিজেদের সঠিকভাবে উপস্থাপন ও সংযোগ তৈরিতে সহায়তা করা।
“এই কর্মসূচিগুলি সাধারণত বিনামূল্যের হয়ে থাকে।”

যেমন, ‘কানেক্টিং উইমেন টু ট্রেডস’ নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকারের একটি উদ্যোগ। এসএসআইয়ের মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়, এটি বিভিন্ন ব্যবসা বা নির্মাণ খাতে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এবং নারীদের জন্য সক্ষমতা এবং সচেতনতা তৈরি করে বলে জানিয়েছেন এসএসআইয়ের জুডি লাজাকানি।
নারীদের জন্য আর্থিক ক্ষমতায়ন কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এই উদ্যোগটি সেটির উপর জোর দেয়, কারণ নারীরা কেবল নিজেদের ব্যয়ই বহন করে না – তারা প্রায়শই তাদের বর্ধিত পরিবারের সদস্যদেরও আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
বিভিন্ন ট্রেড বা ব্যবসায় নারীদের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি আমাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ একটি সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এবং নতুন নতুন পেশা বিবেচনা করার জন্যে নতুন অনেক দিক উন্মোচন করে।
লরি নওয়েল আরও বলেন, যারা হসপিটালিটি বা আতিথেয়তা শিল্পে কাজ করার বিষয়টি বিবেচনা করেছেন, তাদের জন্যে সুখবর হচ্ছে এএমইএস অস্ট্রেলিয়া এই ক্ষেত্রগুলিতে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে থাকে।
অ্যাগনেস কেমেনেস বলেন, কয়েক মাসের স্বেচ্ছাসেবী কাজের প্রস্তাব দিলে আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যেতে পারে।
যদি সংস্থাটি আপনার কাজের মান এবং আপনার কর্মনিষ্ঠায় খুশি হয়, তখন হয়ত সেখানে আপনাকে বেতনসহ কোনো পদের প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।
মিজ কেমেনেস বলেন, সবারই অস্ট্রেলিয়ায় প্রচলিত বিভিন্ন বেতন-স্কেল নিয়ে খোঁজ খবর করে রাখা উচিত।