#খেলা #জাতীয় #সর্বশেষ খবর

এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব শেষ মুহূর্তের গোলে ভাঙল হৃদয়

একটু আগে যেখানে শমিত সোমের গোলে সমতা ফেরানোর উদযাপনে ব্যস্ত বাংলাদেশ শিবির, সেখানেই কিনা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে হলো স্বপ্নভঙ্গ। রাপায়েল মার্কিসের শট মিতুল মারমার হাত ফসকে জালে জড়াতেই স্তব্ধ হয়ে যায় জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি। দুই গোলে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তনের দারুণ গল্প লিখেও পরাজিত। বৃহস্পতিবার এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে হংকং চায়নার কাছে ৪-৩ গোলে হেরে যাওয়া হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দলের মূল পর্বে খেলার আশাটা কার্যত শেষ হয়ে গেছে। গ্রুপ ‘সি’তে তিন ম্যাচে ১ পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশের অবস্থান টেবিলের তলানিতে। বাংলাদেশের মাটিতে জিতে যাওয়া হংকং ৭ পয়েন্ট নিয়ে আছে টেবিলের শীর্ষে। ১৪ অক্টোবর হংকংয়ের মাঠে গিয়ে ফিরতি লিগে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

সাত গোলের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের এমন সমাপ্তি মানতে পারেননি হামজা চৌধুরী। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই মাঠের একপাশে নীরবে বসে থাকেন তিনি। ফাহমিদুল ইসলাম কাঁদতে থাকেন। অথচ বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য গতকালকের দিনটি হতে পারত ঐতিহাসিক। হামজার চোখ ধাঁধানো ফ্রি কিক গোলের পর হংকংয়ের দুই গোলে যখন পরাজয় উঁকি দিচ্ছিল, তখন শেখ মোরসালিন আর শমিত সোমের গোল। অসাধারণ ফুটবলের প্রদর্শনী দেখানো বাংলাদেশকে একাই হারিয়ে দিয়েছেন হ্যাটট্রিকম্যান রাপায়েল। এদিন লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হওয়া যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জায়ান আহমেদ নিজের সেরাটা মেলে ধরেছেন। দ্বিতীয়ার্ধে সাদ উদ্দিনের বদলি হিসেবে এ ডিফেন্ডার মাঠে নামার পরই বাংলাদেশের খেলায় গতি বাড়ে। কিন্তু শেষ দিকে গোল হজমের পুরোনো রোগ যে এখনও সারেনি বাংলাদেশের।

র‌্যাঙ্কিংয়ে ৩৮ ধাপ এগিয়ে থাকা হংকংয়ের (১৪৬) বিপক্ষে বাংলাদেশের (১৮৪) শুরুটা ছিল দারুণ। প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামলে কাউন্টার অ্যাটাকে ক্যাবরেরার দল দেখিয়েছে নিজেদের ফুটবলশৈলী, বিশেষ করে দেশের ফুটবলের বড় তারকা হামজা দেখিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত স্কিল। কখনও মাঝমাঠ থেকে আক্রমণের সুর বেঁধে দিয়েছেন। দলের বিপর্যয়ে দ্রুত নিচে নেমে এসে উদ্ধার করেছেন। আবার দ্রুতগতিতে আক্রমণে গিয়ে গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। এদিন সব জায়গাতেই ছিল হামজার বিচরণ। ‘আমার দলে হামজা থাকলে বেঞ্চে রাখতাম’– বুধবার হংকংয়ের কোচ অ্যাশলে ওয়েস্টউডের করা এমন মন্তব্যই কিনা তাতিয়ে দিয়েছে হামজা চৌধুরীকে। ইউরোপিয়ান ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইংলিশ লিগে খেলেছেন। লিস্টার সিটির জার্সিতে ট্রফি জিতেছেন। সেই হামজা কোন মানের ফুটবলার, তা হয়তো জানা নেই হংকং কোচের। বিশ্বমানের গোল করে ২৭ বছর বয়সী এ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মাঠেই হংকং কোচকে জবাব দিয়েছেন। তাঁর মান যে কতটা উঁচু, সেটি দেখেছেন হংকং চায়নার কোচ।

৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলা বাংলাদেশ গোল পেয়ে যায় ম্যাচের ১৩ মিনিটে। বাঁ প্রান্তে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে ফেলে দেন লিওন জোনস। রেফারি ফ্রি কিকের বাঁশি বাজান। হামজা সেটপিস নিতে যাওয়ায় রক্ষণে দেয়াল গড়েন হংকংয়ের ফুটবলাররা। কিন্তু লিস্টার সিটির এ তারকা একেবারে কোনা ঘেঁষে ডান পায়ের যে বুলেট গতির শট নেন, তা চলে যায় হংকংয়ের জালে। পুরো গ্যালারিতে ‘হামজা, হামজা’ রব ওঠে। জাতীয় দলের জার্সিতে এটি তাঁর দ্বিতীয় গোল। এর আগে গত জুনে ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে গোল করেছিলেন তিনি। হামজার এই গোলের পর লিড বাড়ানোর সুযোগ আসে বাংলাদেশের। ২৬ মিনিটে রাকিবের ক্রসে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ঠিকমতো বলে পা লাগাতে পারেননি। এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ প্রথমার্ধের শেষ দিকে কিছুটা এলোমেলো ফুটবল খেলে। সেই সুযোগ কাজে লাগায় হংকং। প্রথমার্ধে যোগ করা সময়ে সমতা ফেরায় তারা। ইউ জেসে জয়ের কর্নার কয়েকজনের মাথায় লেগে চলে যাচ্ছিল বাংলাদেশের সীমানার বাইরে। কিন্তু ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের হেড গিয়ে পড়ে একেবারে ফাঁকা জায়গায়। দৌড়ে গিয়ে এভারটন কামারগো পা ছোঁয়ালে গড়িয়ে গড়িয়ে বল চলে যায় বাংলাদেশের জালে। শেষ দিকে মনোযোগ হারানো বাংলাদেশের জন্য এই গোলটি বড় ধাক্কা হয়ে আসে।

বিরতির পর পর হংকংকে দ্বিতীয় গোল উপহার দেয় বাংলাদেশ। ম্যাচের ৫০ মিনিটে ব্যাক পাসে বল গোলরক্ষক মিতুল মারমাকে দিতে যান সোহেল রানা জুনিয়র। কিন্তু তাঁর ব্যাক পাস মিতুল ধরার আগেই রাপায়েল মার্কিস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জালে পাঠান। এগিয়ে যাওয়ার পর দুই গোল হজম করে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরার আশা কার্যত শেষ হয়ে যায় ৭৪ মিনিটে হংকং তৃতীয় গোল করলে। বক্সের মধ্যে সাদ উদ্দিনের পায়ের ফাঁক দিয়ে সতীর্থ রাপায়েলের উদ্দেশে পাস বাড়ান এভারটন। একেবারে ফাঁকায় বলটি পেয়ে জালে জড়াতে ভুল করেননি রাপায়েল। ম্যাচে এটি তাঁর দ্বিতীয় গোল। ৮৪ মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার সেটপিসে ফাহমিদুলের বাঁ পায়ের উড়ন্ত শট গ্লাভসে জমাতে পারেননি হংকং গোলরক্ষক। আলতো টোকায় বল জালে পাঠিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরানোর ইঙ্গিত দেন শেখ মোরসালিন। ম্যাচের যোগ করা সময়ে আসে স্বপ্নিল গোল। মোরসালিনের কর্নারে প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড়ের মাথা ছুঁয়ে বক্সে যায়। একেবারে ফাঁকায় থাকা শমিত সোমের হেড চলে যায় জালে। সমতা ফেরানোর এই উচ্ছ্বাসটা ২ মিনিট পরই মিইয়ে যায় হংকংয়ের রাপায়েলে গোলে।